 
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             সুজিত দাস
                                            
                                                
                                                সুজিত দাস
                                            
                                            
                                         
                                            
                                        ২৭।
ভগবানের ধাবা এখন একটা হ্যাপেনিং প্লেস। চাটাইয়ের ধাবা কিন্তু নিখুঁত সাজিয়েছে ‘ভার্জিন মোহিতো’র চ্যাংড়াপ্যাংড়াগুলা। কতরকমের যে গাছ! আর মাটিগাড়া থেকে অনেক কিসিমের মাটির পাত্র নিয়ে এসে তার ওপর বাহারি গাছ পুঁতে সে এক উস্তম-কুস্তম ব্যাপার। ভেতরের ফ্যামিলি সেকশনে বাতিল গিটার, পুরনো সেতার, তার ছেঁড়া সরোদ এসব দিয়ে এলাহি ব্যাপার। ওরা নিজেরাই আসে, গান গায় আবার ‘ভগবানের ধাবা’ সাজিয়েও দেয়। ইন্টিরিয়র ডেকরেশন না কি কীসব একটা ভজঘট ব্যাপার। বোঝে না ভগবান এত কিছু তবে দেখতে ভাল লাগে খুব। কম পয়সায় যে এত সাজানো যায় আগে জানা ছিল না। এখন আর শুধু ট্রাক ড্রাইভারই না, সংখ্যায় কম হলেও পথচলতি গাড়ি থেকে রাতের বেলা ‘ডিনার’ করতে আসা মানুষজনও ‘ভগবানের ধাবায়’ আসা শুরু করেছে। মাঝে মাঝে নিজের গায়ে চিমটি দেয় ভগবান। সবকিছু সত্যি তো!
সত্যি বলে সত্যি।
আজ শালুগাড়া থেকে সুমন ইয়লমো এসেছে। সঙ্গে মোটরগাড়ির প্রচুর বাতিল যন্ত্রাংশ। সুমনের মতো রইসি লোক, সেও কাজে লেগে গেল। ধাবা সাজানোর কাজে। গাড়ির স্টিয়ারিং, টায়ার, ইঞ্জিনের টুকিটাকি জিনিস দিয়ে কয়েকঘন্টা ধরে দুইজন লোককে নিয়ে ধাবার একটা দিকের চেহারাই বদলে দিয়ে গেল। কাজ শেষ হলে ওই বিশাল চেহারা জড়িয়ে ধরে ভগবানকে, ‘তিমিরো ধাবাকো অনুহার নৈ মইলে বদলি দিয়ে। তিমিলাই ইয়ো কে মন পড়েও?’
উত্তর আর কী দেবে! খুবই মনে ধরেছে। চোখে জল চলে আসে ভগবানের। এতদিন জানত তারক ব্যানার্জি জমি টাকা দিয়েছে আর নিজে খেটেছে। খুব খেটেছে। কোনও অসততা করেনি জিনিসপত্র কেনার ব্যাপারে, রান্নার মশলাপাতি থেকে মাছ মাংস। কিন্তু এখন এখন এই ধাবা মালিক ওর প্রিয়জনেরা সবাই। সুমন জড়িয়ে ধরার পর জলে ভেসে যেতে থাকে বেহালাবাদকের দুই চোখ,
‘আরেকটুক্ষণ থাকেন সুমনদাজু, ইলাদি আজ ‘পাটি’ দিবে এখানে। পঞ্চাশজন লোক খাবে সইন্ধ্যাবেলায়।’
‘জানি তো ভগবানদা। আমাকেও আসতে বলেছেন। তা কারণটা কী?’
‘কী যে কন, সুমন দাজু। ইলাদির পয়সা খরচের আবার কারণ চাই? ঠিক বাহানা বের করে ফেলবেন একটা। আসল কারণ তো আমার বিক্রি বাড়ানো। লোকজনকে ‘ভগবানের ধাবা’ চেনানো।’
‘তাও বটে। উ মনকো একদমেই রামরো মানছেয় হো। যাই হোক ভগবানদা, আমি একটু ঘুরে আসি। ঠিক সময়মত আবার চলে আসব সন্ধের দিকে।’
সুমন ইয়লমোর বাঘের মতো কালো গাড়িটা এক লহমায় গোশালা মোড় থেকে হুশ করে দেবি চৌধুরানীর ঘাট টপকে মধুপুর শহরের ভেতরে মিলিয়ে যায়।
বিকেলের আলো এখন খুব তাড়াতাড়ি মরে আসে। শীত এল বলে। মধুপুরের শীত আগের সেই কামড় হারিয়েছে। তবুও এ তল্লাটে সন্ধের দিকে একটা হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। এসেছিলে তবু আসো নাই টাইপের শীত।
ইলা ব্যানার্জি এলেন ইলা ব্যানার্জির নিজস্ব চালে।
সঙ্গে মধুপুর শহরের প্রায় পঞ্চাশজন মানুষ। কয়েকদিন ডিপ্রেশনের পর আজ সকাল থেকে মধুপুরের আকাশ আবার ঝলমল করছে। আসন্ন শীতের উদযাপন হচ্ছে এই সন্ধ্যায়। কেন জানি ইলার মনে হয়েছে এবছর খুব শীত পড়বে। এবছর পুরনো ভারি কার্ডিগান বেরিয়ে আসবে ন্যাপথলিনের আদর ছেড়ে। এসব মনে হয়েছে বলে ইলা সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে চান। আসলে ইলা উদযাপনের ছল খোঁজেন। এবং ওঁর ছলের অভাব হয় না।
মংরা এই পার্টিতে আসতে চায়নি কারণ ‘ভগবানের ধাবা’ সুরা বিবর্জিত। ‘বার’ লাইসেন্স নেয়নি ভগবান। আর মধুপুর শহরের সান্ধ্য জমায়েতে সোনালি তরলের অনুপস্থিতি মেনে নেওয়া একটু কষ্টকর। তারক ব্যানার্জি একদিনের জন্য ডি এম সাহেবকে রিকোয়েস্ট করে টেম্পোরারি ‘বার’ লাইসেন্স নিয়েছে। আজ তাই ‘ভগবানের ধাবা’-তে গ্লাসের টুংটাং, ঈষৎ স্খলিত আওয়াজ এবং একটু কোণের দিকে তথাগতর ভাত ও খিদে বিষয়ক স্বরচিত কবিতা। ম্যাডাম ডি এম শ্রীমতী আরতিরানি এলেন নীলবাতির গাড়িতে। সাহেব আজ আসতে পারেননি। এস পি সাহেবও এসেছেন একটু আগে। পার্টি জমে উঠেছে নিজের নিয়মে। দূরে একটু আড়ালে ভগবান ব্যস্ত রান্নার তদারকিতে। ভালই জানে, ইলাদি সবাইকে নিয়ে এসেছেন এই ধাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই।
‘কী এত ভাবো বলত তুমি? ভগবানদা?’
‘ভাবি, তোমার কি টাকা পয়সার প্রতি কোনও মায়া মমতা নাই, ইলাদি? কী দরকার ছিল টাকার শ্রাদ্ধ করে এত লোক খাওয়ানোর?’
ইলা জানেন কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর নেইও।
‘শোনো ভগবানদা, দুটো জিনিস তুমি ছেড়ো না কখনও। বেহালা এবং হাঁটা। আজ বাজাবে তুমি, অনেকদিন তোমার বাজনা শুনি না।’
‘ধাবা আমার সুর কেড়ে নিচ্ছে দিদি...’
‘কোনও কথা শুনতে চাই না। এই নাও সুপ্রভাতের এক ক্লায়েন্ট জম্মু থেকে এই শাল পাঠিয়েছে। বেহালাবাদক ছাড়া কাউকে এই জিনিস মানাবে না। সাদার ওপরে মিহি কারুকাজটা দেখো।’
‘তুমি কাঁদিয়ে দিতে শিখেছ খুব’, ভগবানের চোখ জল।
‘রান্না ছাড়ো। রেডি হয়ে নাও। একটু পরে তো আমিই কাঁদব তোমার বেহালার সুরে।’
গোশালা মোড়ের একটি জাতে না ওঠা ধাবায় এই শহরের প্রতিষ্ঠিত মানুষজন আজ আবার ভগবান দাস বেহালাবাদকের সুরের মূর্ছনা মুগ্ধ হয়ে শুনছেন। এই প্রথমবার ভগবান বেহালা বাজাচ্ছে নিজের জায়গায়। এতদিন মানুষের বাড়িতে, রাস্তার মোড়ে কোথায় না বাজিয়েছে বেহালা। আজ নিজের জায়গায় বাজাচ্ছে। আসলে এখন আর এটা ওর নিজের নয়, সবার। আজ খুব সুন্দর সুর লাগছে, যেভাবে চাইছে ঠিক সেইভাবে কথা বলছে পুরনো বেহালা।
সামনের ফাঁকা জায়গায় একটু আড়ালে আইসি মিত্র দাঁড়িয়ে আছেন হিমমাখা এই সন্ধেতে। সাহেবসুবোর নেমতন্ন থাকলে ইটস্ পার্ট অফ দ্য প্রোটকল। সাহেবরা সবাই ভেতরে। নিজের সিটে বসে সিগারেট ধরান মিত্র। একটু আগেই তারক ব্যানার্জি দুটো গ্লাসে হুইস্কি নিয়ে এসেছিল,
‘স্যর, এই সন্ধ্যায় এমনি এমনি ডিউটি করা যায়? ন্যান্, ধরেন গেলাসদুটো। আপনি সাদা পোষাকে আছেন।’
‘আজ মেয়ের জন্মদিন, তারকবাবু। শালার ডিউটি করতে করতে ছেলেমেয়ে দুটো যে মায়ের ইচ্ছায় কখন বড় হয়ে গেল, বুঝতেই পারলাম না।’
‘গ্রহ স্যর, সব গ্রহের ফের।’
‘মায়ের ইচ্ছায় যা সব ঘটছে চারদিকে। আর পেপারওয়ালারাও পারে। তার ওপর এই মোবাইল আর পোর্টাল। মধুপুরের পোস্টিংটা অনেক কষ্টে পেয়েছিলাম। মায়ের ইচ্ছায় তাও যাবে মনে হচ্ছে।’
‘চিন্তা করবেন না, স্যর। আংটি ধরেন, আংটি। একটা মুক্তা ন্যান, মাথা ঠাণ্ডা থাকবে।’
‘মায়ের ইচ্ছায় যা চলছে চারদিকে...’, কথা শেষ করার আগেই আই সি মিত্র দেখতে পেলেন দুটো ছায়ামূর্তি ট্রাক টার্মিনালের দিক থেকে হেঁটে আসছে। এতদিনের পুলিশি চাকরিতে ছায়া দেখে মানুষ একটু আধটু চিনতে শিখেছেন। টাউন ডিএসপি আর ওই গানের দলের মেয়েটা। কী যেন নাম, মায়ের ইচ্ছায় মনেই পড়ে না। জন্নত।
‘আপনি তাহলে দেখুন একটু ভেতরটা তারকবাবু’, আইসি সাহেব জানেন ডিএসপি সাহেব এখন এখানেই আসবেন সিগারেট খেতে।
টাউন ডিএসপিকে দেখলেই একটা অস্বস্তি হয় মিত্রের। লোকটা দারুণ স্বভাবের, মিশুকে, অসম্ভব ইনট্যুইশন তবু চোখ দুটো যেন ভেতরটা স্ক্যান করে নিচ্ছে। এস পি সাহেবকেও খুব বিনয়ের সঙ্গে না বলে দিতে পারে। এই পোস্টিং-এ কতদিন থাকবে কেউ জানে না। যা হাবভাব ব্যাটালিয়নে যে কোনও মুহূর্তে বদলি হয়ে যেতে পারে। তাতে ওঁর কিছু যায় আসে না তবে অফিসার হিসেবে খুব ভাল। এই এতদিনের চাকরি জীবনে মায়ের ইচ্ছায় কম ডিএসপি তো দেখেনি মিত্র।
‘মিত্র, কী কাজ এখানে? বাড়ি যান। আজ আপনার মেয়ের জন্মদিন। বড় সাহেবকে বলে দিয়েছি আমি।’
‘থ্যাঙ্কু স্যর। থ্যাঙ্কস এ লট। তবে...’
‘কী তবে?’
‘প্যাটার্ন স্যর, মায়ের ইচ্ছায় এটাও একটা প্যাটার্ন।’
‘খুলে বলুন, মিত্র।’
‘স্যার আপনার সঙ্গে ছায়ার মতো আজকাল ওই মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছি। ছায়ারও কি প্যাটার্ন আছে, স্যর?’
‘জাগতিক সব কিছুর মধ্যেই একটা প্যাটার্ন আছে, আই সি সাহেব। বাড়ি যান, মেয়ে ওয়েট করছে।’
‘গুডনাইট স্যর’, জুতোয় আওয়াজ তুলে সিভিল স্যালুট করে মিত্র।
পার্টি শেষে সবাই ফিরে গেছে এখন। ‘ভগবানের ধাবা’ শুনশান। তারক ব্যানার্জি শেষ চুমুকটা দিয়ে ভগবানের দিকে তাকান,
‘বুঝিস কিছু, সুরের নাগর?’
‘আপনেই ক’ন দাদা।’
‘এমন দিন আসছে পাশের লোকটাও ‘কোড গ্রিন’-এর লোক হবে একদিন। দেখে নিস।’
‘টাউন ডিএসপি?’
‘সব গ্রহ ভগবান, গ্রহের ফের।’
হরেন কুণ্ডুর ভিডিও এখন মোবাইল থেকে মোবাইলে ঘুরছে।
মোবাইল একটা সরেস জিনিস বটে। পেপারের মতো একদিন বাদে ঠোঙা হয়ে যায় না। টিভির খবরের মতো কয়েকঘন্টা বাদে বাসি হয়ে যায় না। তার ওপর হরেনের মতো নেতা। ভাবা যায়! বাঘ আর গরুকে একঘাটে জল খাওয়ানো নেতা। সেই হরেনকে কি না পিছমোড়া অবস্থায় সার্ফের মোড়ে পাওয়া গেল! সেই হরেনকে পুলিশের আগেই মিডিয়া আবিষ্কার করে ফেলল! কী অশৈলী কাণ্ড। তারপর হরেনের বলা তালিকা অনুযায়ী একে একে ইন্দ্রপতন হচ্ছে। কে নেই তাতে! সব দলের বড়, মাঝারি এবং ছুটকো নেতা। প্রশাসনের একটা অংশ, এমনকী মিডিয়াও।
মধুপুর এবং সন্নিহিত অঞ্চল কেমন থমকে আছে। ঝড়ের আগে যেভাবে থমকে থাকে চরাচর, ঠিক তেমনিভাবে। আরও বড় কিছু একটা হবে নিশ্চয়ই। হরেন কুণ্ডুর স্বীকারোক্তি বোলতার চাকে ঢিল ফেলেছে। এর রেশ সহজে মুছে যাবে না। যাবে না বলেই আজ এস পি-র চেম্বারে মিটিং। বাইরে লাল আলো জ্বলছে। ভেতরেও থমথমে মুখে এতদ অঞ্চলের পুলিশের টপ ব্রাশ।
‘সো, দে হ্যাভ ডান ইট। দ্যাট টু ইন সাচ আ ম্যানার, পুলিশের মানসম্মান কিছুই তো রইল না আর। এগারো জন অফিসারকে সাসপেন্ড করতে হয়েছে। কুণ্ডুর ডায়েরি তো প্রায় কেউ বাদ নেই। শালা, ডায়েরিতেও এত ডিটেইলসে লিখে গেছে, কোর্টে দাঁড়িয়ে যাবে।‘
‘স্যর, আমি বুঝে পাচ্ছি না ডায়েরির কনটেন্ট মিডিয়ার হাতে গেল কী করে?’, মিলন গোম্বু এস পি-র দিকে তাকিয়ে নিজের অসহায়তা ব্যক্ত করেন।
‘ইয়েস মিলন। সেটা নিয়ে আমিও ভেবেছি। হয় আমাদের এন্ড থেকে লিক হয়েছে অথবা কুন্ডু একটা প্যারালাল ডায়েরি মেনটেইন করত। হিসেবের কাঁচা খাতা।‘
‘হোয়্যাটস নেক্সট, স্যর’?, সৌরভ দাত্তা এস পি সাহেবের কাছে পরের কোর্স অফ অ্যাকশন জানতে চায়।
‘আসলে এর পরেও অ্যাকশন হবে। এবং যতবার এটা হবে মানুষের মনে এই ক্লেনজিং অপারেশনগুলো তত মান্যতা পাবে। ভাবতে অবাক লাগে এই প্যাটার্নটা এতদিনেও আমরা ধরতে পারলাম না। আচ্ছা, মিলনজী, ওই মেয়েটা, কী যেন নাম, রাধারানি রে, ট্রিপল আর, ওর সম্পর্কে লেটেস্ট ফিডব্যাক কী?’
‘স্যর, এসি টু টিয়ার কামরায় কলকাতা ফিরে গেছে। আমার লোক ওকে শ্যাডো করে গেছে। ওর ডায়েরিও আমি দাত্তা সাহেবকে দিয়েছি। নাথিং ওয়র্থ মেনশনিং।’
‘তবু নজরে রাখুন। কিপ আ ক্লোজ আই অন হার। উই শুড লিভ নো স্টোন আনটার্নড। আর রুলিং পার্টি এখন হরেন দত্তকে ডিসওন করছে, সেটাই স্বাভাবিক। হরেনের বিরুদ্ধে এভিডেন্সগুলো ফুলপ্রুফ করো। কোর্টে ওয়াটার টাইট কেস সাজাতে হবে। রুথলেসলি।’
‘স্যর’, সকলে সহমত হয়। এটাই দস্তুর। উর্দির ডিপার্টমেন্টে র্যাঙ্ক কথা বলে। বাকিরা সহমত হয়ে এক্সিকিউট করে।‘
মিটিং সেরে শিলিগুড়ি ফিরে আসতে আসতে সন্ধে নেমে আসে। এসডিপিও অফিসের সামনের রুদ্রপলাশ গাছটিতে পাখিরা ফিরে আসছে। ঘরে ফেরার সময় পাখিরা বড্ড কিচিরমিচির করে। শীতের শেষ বিকেলে আলো মরে আসছে। দূরের মহানন্দা বিজের হ্যালোজেন আলোগুলো জ্বলে উঠেছে অনেকক্ষণ। মিলন গোম্বুই এই ঘরের নিস্তব্ধতা ভাঙেন,
‘স্যর, হরেনের ডায়েরির কপি কি নষ্ট করে দেবো?’
‘একদম না। কাল সকালে শুক্রা আসবে আপনার বাড়িতে। আপনার বাড়ির কেবল্ লাইন ঠিক করতে। ওর হাতেই ডায়েরিটা দিয়ে দেবেন। আপাতত কিছুদিন ওটা বাতাসীর প্লাইউড কারখানাতেই থাকুক। এইচ ডি-র লোকলস্করের অভাব নেই। ঠিক কারো না কারো কাছে সেফলি রেখে দেবে। এই ডায়েরি হয়ত একদিন আরাত্রিকার হাতে তুলে দিতে হতে পারে। কিংবা প্রশান্ত কর। পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হোক।‘
‘স্যর, ম্যাডামের কী খবর?’
‘কেন আপনি তো শ্যাডো করছেন ওঁকে’, হেসে ফেলে সৌরভ দাত্তা।
‘না স্যর, বাটা সুভাষকে ডেকেছিলেন কলকাতায়। একটা এলিমিনেশনের ব্যাপারে। আ বিগ শট। বড় কবি, রাদার সাহিত্যিক। পিডোফিল।’
২৮।
সাদার স্ট্রিট একটা মিনি পৃথিবী। সারা পৃথিবীর ট্যুরিস্ট এখানে সস্তার হোটেলগুলোতে থাকে। ট্যুরিস্টদের থাকার জায়গার আশেপাশে, যা হয়, বেশ কিছু সাইবার কাফে, মানি এক্সচেঞ্জ শপ, টেলিফোন বুথ গজিয়ে ওঠে। এছাড়াও হরেক কিসিমের খাবার দোকান। একটা সরু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে বাটা সুভাষ ভাবছিল হঠাৎ এখানে কেন!
ওপরে উঠে একটা ছোট্ট ঘরের দরজায় টোকা দেয় সুভাষ।
‘কাম ইন, সুভাষ’, ভেতর থেকে ট্রিপল আর-এর রিনরিনের গলার আওয়াজ ভেসে আসে।
একেবারে সাদামাটা ঘর। একটা ছোট্ট রট আয়রনের খাট, পাশে কাঠের টেবিল, টেবিলের ওপর একটা পোর্টেবল সাদাকালো টিভি।
‘হঠাৎ এখানে কেন, ম্যাডাম?’
‘কাগজে কলমে আমি এখন নেপালে, সুভাষ। আমার আসল পাসপোর্ট নিয়ে আমারই ডামি প্রক্সি দিচ্ছে ছোটখাট অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানগুলো খুব ছোটখাটো এবং ইচ্ছে করেই লো প্রোফাইলের। কোনও হাইপ নেই। শুধু আমার পাসপোর্টে ছাপ থাকুক। তাই আমার এখানে কয়েকদিন থাকা দরকার। আছি এখানে ফ্রেঞ্চ মেয়ের পাসপোর্টে। ছোটবেলায় কয়েকটা ভাষা শিখে রাখার সুফল আমি পাচ্ছি এখন।‘
‘তাই বলে আপনি এভাবে এই রুমে থাকবেন, ম্যাডাম?’
‘কলকাতায় একটা বড় কাজ আছে, সুভাষ। তার আগে ভ্যালেরি ডমিনিক-এর ফরাসি আইডেন্টিটিতে এখানে কিছুদিন থাকা দরকার। ঠিক সময়ে সড়ক পথে নেপাল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা কোরো। অ্যালিবাইটা খুব পোক্ত থাকুক।’
কলকাতায় কী কাজ, ম্যাডাম?’
‘সেটা হতে দেরি আছে কিছুদিন। তার আগে একটা ছোট্ট কাজ তোমাকে করে নিতে হবে বাটা। মোবাইলে কথা বলা বিপজ্জনক বলেই তোমাকে ডেকেছি। মোবাইল এসে যাওয়াতে টেলিফোন বুথগুলোতে ভিড় কম। বুথের মালিক কাস্টমারকে বেশ নজর করে। মেয়ে হলে তো কথাই নেই’, বাটা সুভাষের দিকে খাঁটি ফ্রেঞ্চ চকোলেটের একটি টুকরো এগিয়ে দেয় ট্রিপল আর, ‘কার্তোক মনাস্টারির পাশে দ্য হরাইজন-এ তোমাকে কিছু বই দিয়েছিলাম মনে আছে?’
‘হ্যাঁ ম্যাডাম, স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায়। নামি লেখক। আপনি বলেছিলেন, সেক্সুয়াল প্রিডেটর।‘
‘সেটা একটু কম বলা হল সুভাষ। লোকটা পিডোফিল। এর আগেও অভিযোগ ছিল, তবে আড়ালে আবডালে। এবারে নিজের ভাইয়ের মেয়েকেও ছাড়েনি। চেন্নাইয়ে ওর ভাই থাকেন। সাধারণ ব্যবসায়ী। ওই ভদ্রলোকের দশ বছরের মেয়েকেও মলেস্ট করেছে। হি মাস্ট বি পানিশড। রাদার এলিমিনিটেড। এই রকম একটা হোয়াইট কলার লোক এমন ঘৃণ্য অপরাধ করে যাবে একের পর এক, এটা হতে পারে না। আর হ্যাঁ, মানুষ যাতে বুঝতে পারে মৃত্যুর কারণটাও। তবে বাচ্চার নামটা যাতে প্রকাশ না পায়। একজন মাইনরকে এই ট্রমা থেকে উঠতেই অনেক সময় লাগে, তারওপর নাম মিডিয়াতে চলে এলে সেটা খুব আনফেয়ার হবে। কীভাবে করবে ভেবে দ্যাখো। মধুপুর বইমেলার একটা অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হয়ে যাচ্ছে লোকটা। স্নিগ্ধসুন্দরের কুৎসিত রূপটা সামনে আসুক।’
ভ্যালেরি ডমিনিক। ট্রিপল আর এই পরিচয়ে সাদার স্ট্রিটেই থাকবেন এখন। দেখতেও ফ্রেঞ্চ তরুণীর মতই লাগছে। ম্যাডামের ডিটেইলসের কারুকাজগুলো খুব নিখুঁত। চকোলেট, ব্যাগ, জুতো থেকে ঘড়ি এবং সব অ্যাকসেসরিসও যে নিখুঁত ফরাসি সেটা একঝলক দেখেই বুঝেছে সুভাষ।
ভ্যালেরি ডমিনিক-এর ঘর থেকে বেরিয়ে সাদার স্ট্রিটে পা রাখার পর মনে মনে গোটা এপিসোডটা ছকে নিতে থাকে সুভাষ।
বাতারিয়া নদীতে আজ খোঁচ দিয়ে অনেক নদিয়ালি মাছ ধরেছে শুক্রা। এখানে খাওন দাওনের কোনও সমস্যা নাই। বাতাসি হাটে তো রমরমা ব্যাপার। মাছ, মাংস, সবজি, সে এক এলাহি ব্যাপার। তবে নদীর মাছের স্বোয়াদটাই অন্যরকম। তারওপর সাবিত্রিদির রান্না। সারাদিন কাজের পর প্রায়ই এখানে মাছ ধরে শুক্রা। মনের মতো খাওয়া, মোটামুটি থাকার জায়গা, মাস গেলে মাইনা আর মাথার ওপর হরিদা আর সাবিত্রিদি। জীবন ভাল কাটছে বটে এতদিনে। বাপ-মা মরার পর তো লোকের লাথ-ঝাঁটা খেয়ে খেয়েই দিন কাটিয়েছে। এতদিনে থিতু হতে পেরে ভাল লাগে শুক্রার। তবে এখানে কোনও অ্যাকশন নাই। হরিদা সারাদিন বিএলআরও অফিসে পড়ে থাকে। লোকের যাতে সন্দেহ না হয় সেজন্য টুকটাক জমির দালালিও করে। ‘বিএলআরও অফিসকে চিনতে হলে দালালিটা শিখে নিও, হরি, দালালদের থেকে ভাল জমির ভূত ভবিষ্যৎ স্বয়ং ভগবানও জানেন না’, এই মন্ত্রটা ভগবানদা দিয়ে গেছে। এছাড়াও ‘কোড গ্রিন’-এর কয়েকজনের সঙ্গে সেট করে দিয়েছে হরিদাকে। আর হরিদা, ক্যালি আছে বটে লোকটার মাছ যেভাবে জলে মিশে থাকে, সেভাবেই এই বাতাসিতে সেট করে গেছে হরিদা। রোজ সকাল থেকে সন্ধে অবধি বিএলআরও অফিসেই পড়ে থাকে, দুপুরে সামান্য সময়ের জন্য খেতে আসে শুধু। কখনও সখনও বোন্দা বোন্দা কাগজ নিয়ে মধুপুর শহরে চলে যায় সুপ্রভাত উকিলকে দিতে।
তবে একটাই দুঃখ, এখানে আসা ইস্তক বড়ই ফিকা দিন কাটছে, কোনও অ্যাকশন নাই, কোনও অপারেশন নাই। রোজ শুধু প্লাইউড কারখানার সুপারভাইজারি, খাওন আর ঘুম। সময় কাটানোর জন্য মাঝে মধ্যে এই মাছ ধরা। তবে কিছু একটা যে ভেতরে ভেতরে পাকছে সেটা টের পায় শুক্রা। বাইরের লোক খুব কম আসে এখানে। যে দু-একজন আসে, তাদের সঙ্গে হওয়া কথাবার্তায় মালুম হয় কিছু একটা হবে। এবং বেশ বড় কিছুই।
আজ রাতের খাওয়ায় বেশ জম্পেশ রান্না হচ্ছে। পোল্ট্রির ঝাল, নদিয়ালি মাছের ভাজা আর কলাইয়ের ডাল। হরিদা শুক্রার ধরা মাছভাজা দিয়ে একটা ফিফটি নিয়ে বসেছে নদীর ধারে। বাতারিয়া নদীর জল বয়ে চলেছে কুলকুল করে। বহতা এই জলের ঝোরা প্রায়ই ধাক্কা খাচ্ছে প্রতিস্পর্ধী ডুংগায়। পাথর এবং জলের স্রোতের এই সংঘাতে হরিদার নেশা জমে উঠেছে। তবে হাজার নেশা হলেও হরিদার মাথা আর পা টাল খায় না। ব্রেন কাজ করে আয়নার মতো,
‘দিনকাল তো ভালই কাটছে, শুক্রা।‘
‘সব তোমার দান, দাদা। তবে খুব ফিকা সময় দাদা। খুব ফিকা।‘
‘চিন্তা করিস না। বড় অ্যাকশন হবে। ফোঁস করব তবে ডাঁশব না। এখন জমিনে হাল দিচ্ছি রে। জমিন তৈয়ার হোক। তারপর ‘ফুটবলাররা’ আসবে আবার, তুইও থাকবি। মাঝে দু-একবার নাংডালা চা-বাগানে গিয়ে প্রাকটিস করে আসিস।’
‘আমার তিরই ভাল হরিদা। তিরের নিশানা আমাদের রক্তে। বড় মেশিনে হাতে যুত হয় না।‘
‘শোন, সবটাই ফোঁস করার জন্য। ওতেই কাজ হবে। দিনকাল খুব বদলে গেছে এখন। একটা ছোট্ট চিঙ্গারি থেকে আগুন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাউকে মারার দরকার নেই। মিডিয়াই আন্দোলন নজরে নিয়ে আসবে। শুধু প্রথম ফুঁক-টা জোরসে দিতে হবে। ওদিকে কয়েকদিনের মধ্যেই সুপ্রভাত উকিল মামলা করবে। মরা জমিন, মরা মামলা তেরো হাত মাটির নীচ থেকেও ওপরে তুলে জ্যান্ত করে দিতে পারে লোকটা। উকিল তো নয় ভগবান, ভগবান। চল, ঘরকে ফিরি। সাবিত্রি একটু বাদেই চলে আসবে না হলে।‘
রাতের খাওয়া অমৃত সমান লাগে শুক্রার। অ্যাকশনের গন্ধে মনটা চনমন করে। সাবিত্রিদি ভাতও দিতে পারে বটে। বিলাই ডিঙাতে পারবে না এমন ভাত। সবটাই খেয়ে ফেলে শুক্রা। এ প্যাটের খিদা মরে না শালা!
জিলা বইমেলা ধরতে একটু সময় লাগে। প্রথম দু-একদিন স্টল বাঁধার কাজ চলতে থাকে। বইপত্রের ঢাউস প্যাকেট আসে পাবলিশারের স্টলে। সেগুলো বের করে সাজিয়ে গুছিয়ে এক দু-দিন লেগে যায় দোকান দাঁড় করাতে। তবে মধুপুরে বইমেলা একটা ব্যাপার বটে। এফ ডি আই মাঠে প্রথমদিন থেকে গমগম করছে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন। একটা ছোট মঞ্চে রোজ কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, গান। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা জমিয়ে রাখে মেলার এইদিকটা। নিজেদের ম্যগাজিন, ফোল্ডার নিয়ে হইচই করতে করতে কখন যে কেটে যায় এই একপক্ষকাল!
‘ভার্জিন মোহিতো’র ছেলেমেয়েরাও নিজেদের ব্যান্ড নিয়ে বিকেল থেকে জমিয়ে রেখেছে একটা দিক। মধুপুরের আরও দু-একটা ব্যান্ডও গাইছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। জন্নত বেশ মুডে আছে এবারের বইমেলায়,
‘বানা ভাল করে অরিত্র, শেষ পাফটা দিস আমাকে।‘
‘আজ ম্যাডামের মুড বেশ ভাল দেখছি। দুটো গানের পরেই জয়েন্টের আবদার।‘
‘এই শোন না, শেষ দিন তো স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায় আসছেন, না?’
‘বাব্বা, তুই আবার কবে থেকে কবিতা, গল্প পড়তে শুরু করলি? আজব ব্যাপার তো। দুটো কাঁচা প্রেম চটকে দিয়েছিস স্রেফ ছেলেদুটো তোকে ইম্প্রেস করতে গিয়ে কবিতা লিখে ফেলেছিল বলে। হঠাৎ স্নিগ্ধসুন্দরের খোঁজ!
‘লোকটা ব্যাপক ম্যাসকুলিন রে। খুব হ্যান্ডসাম। থাকবে কোথায়, জানিস? তুই তো আবার বইমেলা কমিটিতেও আছিস।’
‘সে তো নাম-কা-ওয়াস্তে থাকা। আরতিরানি ম্যাডাম সবপক্ষের দু-একজনকে কমিটিতে ঢোকাতে হয় বলে আমার নামটা রেখেছেন। ‘ভার্জিন মোহিতো’-র সবচাইতে কম ভিরুলেন্ট সদস্য বলে। মনে হয় পাশে চা-বাগানের গেস্ট কোয়াটার্সে থাকবেন। বিরাট সাহেব আমলের ঘর। লাউঞ্জটাও বড়। ভদ্রলোকের মহিলা ফ্যানের সংখ্যাও তো নেহাত কম না।’
‘আমাকে একটু আলাপ করিয়ে দিস’, চোখ টেপে জন্নত, ‘একটা অটোগ্রাফ নেবো। পিঠে।’
তা এলেন বটে স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায়।
রাজকীয় এন্ট্রি। মধুপুর শহর ভেঙে পড়েছিল রোড স্টেশনে। কবি উত্তরবঙ্গের পালস্টা ফিল করবেন বলে ট্রেনেই এসেছেন। সেদিন রোড স্টেশনে মধুপুরের হুজ হু সবাই হাজির। উলু, শঙ্খধ্বনি এবং সমবেত উল্লাসের মধ্যে মধুপুরে পা রাখলেন স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায়। গায়ের রং দুধের সর যেন। আর হাসিটি ভুবন ভোলানো। পীকক ব্লু পাঞ্জাবিতে কবিকে দেখাচ্ছিল বটে। রাতের মদ্যপান টপকে, এতক্ষণের ট্রেন জার্নি উপেক্ষা করে এই মধ্য চল্লিশেও কবিকে এত ফ্রেশ দেখাচ্ছিল, বলবার নয়। বয়স কোথাও আঁচড় কাটতে পারেনি। দীর্ঘদেহী এই ভদ্রলোকের কপালটাই যা একটু বড়। এছাড়া স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায় একটা টোটাল প্যাকেজ। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্য জগতের প্রথম তিন নক্ষত্রের একজন। হার্টথ্রব। মেয়েরা তো বটেও ছেলেরাও হুমড়ি খেয়ে অটোগ্রাফ নিচ্ছে, ছুঁয়ে দেখছে। বাংলা কবিতার এত পাঠক! ভেবে নিজেকেই দোষ দেয় জন্নত। আজই কামারপাড়ায় বইয়ের দোকান থেকে স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায়ের বই কিনে কিছু লাইন মুখস্ত করতে হবে। জোজো বলছিল কবিদের সামনে ওঁদের কবিতার পঙ্ক্তি স্মৃতি থেকে আওড়াতে পারলে নাকি কবিরা দ্রবীভূত হয়ে যান। অনেকে নাকি কেঁদেও ফেলেন। টোটকাটা মনে ধরেছে জন্নতের।
এখন এই মুহূর্তে রোড স্টেশনে রক্তচন্দনের টিপ কপালে নিয়ে হাসিমুখে সই বিলোচ্ছেন স্নিগ্ধসুন্দর। কয়েকজন অল্পবয়সি মা বাচ্চাদের এগিয়ে দিচ্ছেন আশীর্বাদের জন্য। স্নিগ্ধসুন্দর কারো গাল টিপে, কাউকে কপালে চুমু খেয়ে প্রতিউত্তর দিচ্ছেন। সাক্ষাত সরস্বতীর বরপুত্রের এহেন আশীর্বাদে উপস্থিত জনতা বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনার মতো ভেসে যাচ্ছে। সদ্য শীতের রোড স্টেশনে সে এক অপার্থিব দৃশ্য।
জন্নতকে দেখে ঈষৎ থমকে যান কবি। স্প্যাগেটি টপ আর স্কিনি জিন্সে মৃত্যুর ঠিকানা লেখা থাকে। সঙ্গে এই চোখের মণি। লিথাল ককটেল। জন্নত নিজের করতল এগিয়ে দিয়েছিল। সঙ্গে মার্কার পেন। স্নিগ্ধসুন্দর জন্নতের পিঠে হাত দিয়ে ঈষৎ চাপ দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন,
‘নাম?’
‘জন্নত।’
প্রায় কলারবোন ছুঁয়ে ফেলা একটা পাঞ্জা আরও গভীর চাপ দিচ্ছিল। অন্য হাতে জন্নতের তালুতে লিখে দিয়েছিলেন, ‘তুমিই জন্নত, তুমিই জাহান্নুম। স্নিগ্ধ।’
স্নিগ্ধ নিজের নামটা এমনভাবে লেখেন সইটা একটা মুখের অবয়ব পেয়ে যায়। খুব ভাল করে অটোগ্রাফের সেই মুখ দেখে জন্নত। নারী না শিশু?
অটোগ্রাফের ছবিতে কোথাও কি একটা ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ?
………………………………………………………………………………………………
সব চরিত্র কাল্পনিক।
(ক্রমশ)
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team
