× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: ডিসেম্বর, ২০২১
সম্পাদকের কলম
হিমেল রূপকথা
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
পর্যটনের ডুয়ার্স
তিস্তাবুড়ি খোয়াজপীর-এর দেশে
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
পর্যটনের ডুয়ার্স
রয়্যাল ইকো হাট। নিস্তব্ধতার রাজকীয় উদযাপন
শ্বেতা সরখেল
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
গ্রামীণ উত্তরণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ লিপিতে কী লেখা আছে কে জানে! পর্ব - ৬
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন। পর্ব - ২
সব্যসাচী দত্ত
ধারাবাহিক উপন্যাস
ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট। পর্ব - ১৪
সুজিত দাস
নিয়মিত কলম
মুর্শিদাবাদ মেইল। ড্যাডাং মহারাজ
জাহির রায়হান
নিয়মিত কলম
ল্যাব ডিটেকটিভ। পর্ব ৪। পচা লাশ থেকে খুনির খোঁজ মেলে কিলবিল করা পোকাদের সাহায্যেই
নিখিলেশ রায়চৌধুরী
নিয়মিত কলম
আমচরিত কথা। পর্ব – ১০। ক্ষ্যামা দে শ্যামা!
তনুশ্রী পাল
নিয়মিত কলম
এই ডুয়ার্স কি তোমার চেনা? কালচিনি, ও করোয়া জানি
শৌভিক রায়
বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ভারতীয় নারী
পূর্ণিমা সিংহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম পিএইচডি নারী
রাখি পুরকায়স্থ
পুরানের নারী
রানী বপুষ্টমার কথা
শাঁওলি দে
পাতাবাহার
বারান্দায় বাগানবাহার
পাতা মিত্র

মুর্শিদাবাদ মেইল। ড্যাডাং মহারাজ

জাহির রায়হান
Murshidabad_Dyadang
ছবি - সুবল দাস ওরফে ড্যাডাং মহারাজের মূর্তি

‘ড্যাডাং’ শব্দের অর্থ কি ল্যাংটা? না ডানপিটে? যাইহোক না কেন আমাদের ছোটবেলাটা জুড়ে ছিল ‘ড্যাডাং’ শব্দখানি। বিশেষ করে যখন মামার বাড়ি যেতাম তখন। মামার বাড়িতে ড্যাডাং ছিলাম তিনজন, আমরা দুই ভাই এবং আমাদের ছোটমামা। অবশ্য আর একজনও ছিল, যদিও আসল ‘ড্যাডাং’ তিনিই। কালো মিসমিসে গায়ের রঙ। হাঁটতেন একটু দুলে দুলে। ভালবাসতেন রসে ভরা জিলিপি।

আমার মামার বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দি শহরে। মহকুমা শহর কান্দি। ছোট্ট শহর। রেল যোগাযোগ ছিল না তখন, এখনও নেই। তবে গোটা শহর জুড়েই আছে একটা ছায়াময়তা, একটা পাড়া পাড়া গন্ধ। উৎপাতহীন, উপদ্রবহীন একেবারে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। শহরের সিনেমা হলগুলির নামও কাব্যিক-ছায়াপথ, অরুণা, চিত্রা। আর ছিল মনোরঞ্জনের আঁতুড় ঘর ‘মনোরঞ্জন ভিডিও হল’। শহরের ঠিক মধ্যিখানে আজও রয়েছে মোহনবাগান মাঠ। কী বিশাল তার পরিসর। অনায়াসে চারটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলতে পারে একইসাথে। আর রয়েছে হ্যালিফক্স ময়দান। মোচার চপ পাওয়া যেত তার পাশেই। আর পদ্মপাতায় ঘুগনি-মুড়ি। কলাবাগান, লিচুতলা, কাঁঠালতলা, বিশ্রামতলা- ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে শহরবাসী। শহরের পশ্চিমে মোর নদী, আমরা বলতাম কানা ময়ূরাক্ষী। সারাবছর মরার মতো পড়ে থাকে আর আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে বর্ষায়। তখন তার গতি দুরন্ত, সে গতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে রণে ভঙ্গ দেয় আমাদের পলকা কাগুজে নৌকো। জোর বৃষ্টি হলে নদীও বাঁধানো ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে শহর দেখতে আসতে চায়, তাকে আটকে রাখে হোমতলা কালী মন্দির। কালীস্থানে পাঁঠাবলির ভয় দেখিয়ে আমাদের ঘুম পাড়ায় নানি-খালা। আমরা তো ঘুমিয়ে পড়ি, কখনও মা কালীর ভয়ে, কখনও মেজো মামার ভয়ে। কিন্তু শহরজুড়ে জেগে থাকে একজন হাবাগোবা ধরণের আত্মভোলা মানুষ। যার পোশাকি নাম সুবল দাস। লোকে তাঁকে ‘ড্যাডাং’ বলে। কোথায় থাকেন, কেউ জানে না, কিন্তু থাকেন, ড্যাডাং থাকেন, মুখময় অনাবিল হাসি নিয়ে।

সে অনেক বছর আগের কথা। কান্দি শহরময় আপন মনে ঘুরে বেড়াতেন জগত-নির্লিপ্ত এক পথচারী। মুক ও বধির। পরনে তার সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি, আজানুলম্বিত। শহরের পাশেই মাধুনিয়া গ্রাম, সেই গ্রামেরই ওলা পাড়ায় জন্ম তাঁর। তবে জন্ম কবে, তা অজ্ঞাত। জাতিতে হিন্দু। পরিবারিক পেশা সূত্রধর। সুবল দাস কীভাবে, কত দিনে ‘ড্যাডাং’ হয়ে উঠেছিলেন তার ইতিহাস জানা মুশকিল। ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়ানোর কারণেই কি তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল ড্যাডাং? সেকথাও জানা যায় না আজ আর। কিন্তু তিনি ছিলেন। খাবার চেয়ে খেতেন দোকানে দোকানে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেই তাকিয়ে থাকতেন ফ্যালফ্যাল চোখে। দাঁত বের করে হাসতেন অহরহ। হাতে সর্বদাই থাকত ‌একটি ছোট্ট লাঠি। ঐ লাঠি দিয়ে নিজের পেট বাজাতেন আপন খেয়ালে। রাত হলে, পথে-ঘাটে বা রাস্তার ধারের কোন বারান্দায় সটান ঘুম।

এই ভাবেই চলছিল শহরের দিন-রাত। রাস্তায় আমরাও তাঁকে দেখেছি বহুবার। বাড়িতে বড়দের কথা না শুনলে আমরাও তিরস্কৃত হয়েছি ‘ড্যাডাং’ তকমায়। তবে আসল ড্যাডাং-এর কপাল খুলে গেল হঠাৎ করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খেয়াল করল, যার দোকানে ড্যাডাং খাবার চেয়ে খায়, তার দোকানে বিক্রি বাড়ে হু হু করে। এরপর থেকে সবাই বিশেষ করে খাবারের দোকানিরা ড্যাডাং খাবার চাইলে না করত না, এমনকি কেউ কেউ খাবার নিয়ে অপেক্ষা করত তাঁরই জন্য। তেলেভাজার দোকানদার একটা আলুর চপ, কিছু বেগুনি ও ডালবড়া ড্যাডাং-এর জন্য সরিয়ে রেখেছে আলাদা করে এরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার নিজেরই। তবে অনেকসময় খেতে দিতে চাইলেও খেতেন না ড্যাডাং। কেউ কোনো ভালো জামাকাপড় পরিয়ে দিলেও শরীরে রাখতেন না তিনি। কিছুদূর যাবার পরই স্যান্ডো গেঞ্জিটা ছাড়া বাকি সব পরিধান ফেলে দিতেন টান মেরে। তাঁর লজ্জা বোধ ছিল না, ল্যাংটো দেখে দেখে চোখ সওয়া হয়ে গিয়েছিল শহরবাসীরও।

দিন যায়। মাহাত্ম্য বাড়তে থাকে ড্যাডাং-এর। কেউ ডাকে ড্যাডাং বাবা, কেউ বলে ড্যাডাং মহারাজ। রিক্সাওয়ালারা খাতির করে বিনে পয়সায় রিক্সা চড়াত তাঁকে। কারো রিক্সায় একবার চড়লে রিক্সাওয়ালার আয়ের পরিমাণ নাকি বেড়ে যেত বহুগুণ। মাঝে মাঝেই দেখতাম কারো রিক্সায়, বা ভ্যানে বসে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে চলে গেলেন ড্যাডাং বাহাদুর। এমনকি অনেক মানুষ পেতে চাইত তাঁর স্পর্শ। তাঁর হাতের স্পর্শে জাদু ছিল বলে বহুজনের বিশ্বাস। ড্যাডাং একবার ছুঁয়ে দিলেই ভালো কিছু ঘটবে বলে বিশ্বাস করত অনেকেই। পরীক্ষার দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত পরীক্ষার্থী, চাকুরি প্রার্থী বেকার যুবক-যুবতী, অসুস্থ রোগী-রোগিনী সকলেই চাইত তাঁর হাতের ছোঁয়া।

সেদিন গেছে বয়ে। আজকের প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানে না বোধহয়, তবে শহরের পুরানো বাসিন্দাদের অনেকের স্মৃতিতেই জেগে রয়েছেন ড্যাডাং বাবা। তারা তাঁকে স্মরণ করে অবতার জ্ঞানে। ১৩৮৯ সনের কার্তিক সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ ১৬ই নভেম্বর ১৯৮২, মঙ্গলবার প্রয়াত হন সুবল দাস ওরফে ‘ড্যাডাং’। ছাতিনা কান্দির কানা ময়ূরাক্ষীর তীরে নির্মিত হয়েছে ড্যাডাং মহারাজের সমাধি-মন্দির। সেখানে প্রতি অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে আয়োজিত হয় বিশাল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, বসে মেলাও। শহর ও আশপাশের অঞ্চল হতে সমাগম ঘটে বহু মানুষের।

ইহলোক ত্যাগ করেও আজও জনজীবনে জীবিত ড্যাডাং মহারাজ। কান্দি শহর বা সন্নিহিত অঞ্চলগুলির বহু দোকান ও গৃহস্থ বাড়ির ঠাকুর ঘরে পরম শ্রদ্ধায় এখনও পূজিত হন তিনি। ঠাকুরের আসনে বহাল তবিয়তে বিরাজিত ড্যাডাং। কুচকুচে কালো মসৃণ শরীরের উপর দুধ সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি। নিষ্পাপ হাসি মুখ। বাহ্যজ্ঞান রহিত এক উদাসীন বৈরাগী।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team