বেশ কিছু সহকর্মী ব্যাঙ্ক শুরুর প্রথম দিকেই চাকরি ছেড়ে অন্য সংস্থায় ভাল অফারে চলে গিয়েছিল। কিছু ছেলে অন্য ব্যাঙ্কে গিয়ে যথেষ্ট দক্ষতায় দ্রুত প্রমোশন পেয়েছিল। তবে তখনও তারা জানতেন না গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন কাঠামো বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সমতুল হবে। ময়ূরাক্ষী গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে কয়েকজন যেমন শান্তি ঘোষাল, বিশ্বনাথ ব্যানার্জী, সুনীল মন্ডল পরীক্ষা দিয়ে আমাদের এখানে যোগদান করেছিল । পরে আবার ওরাই অফিসার্স পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ময়ূরাক্ষী গ্রামীণ ব্যাঙ্কে জয়েন করেছিল। শুরুর দিকে পেয়েছিলাম গৌতম চ্যাটার্জী ও মিলন বিশ্বাসকে, দুজনেই পাহাড়ে কাজ করতে ভালবাসত। মিলন ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডে চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছিল। গৌতম শান্তিনিকেতনের ছেলে যেমন ভাল গান গাইত তেমনি মিষ্টি ছিল ব্যবহার। প্রভাস দাসের ফেয়ার ওয়েলে গাওয়া ওর গানে চোখের জলে বান এনেছিল অনেকের।
এমনও দু-একজন আছেন যারা ব্যাঙ্ক ছেড়ে গিয়েছিল কিন্তু সম্পর্কের উষ্ণতা স্থির হয়ে আছে দীর্ঘ সময় জুড়ে। দেখা হলেই আমরা বেশ খানিকটা প্রগলভ হয়ে পড়ি। ওরা যখন ইচ্ছে বাড়িতে আসে, লম্বা আড্ডা চলে। কোচবিহারের রতন দেব এবং জলপাইগুড়ির কাজল সিনহা তেমনি দুজন। ওরা ইউকো ব্যাঙ্কে কাজ করত। দক্ষ ব্যাঙ্ক কর্মী এবং ইউনিয়নের কর্তা হিসেবে ওরা যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিল। কাজল রিটায়ার করার পর কলকাতায় আছে পারিবারিক কারণে। তবে ওর মন পড়ে থাকে উত্তরবঙ্গে। রতন কাছে আছে সর্বদা টের পাই।
তড়িৎ দেবনাথ, মনোজ শীলশর্মা ও আরো দু-একজন ইউনাইটেড ইনডাসট্রিয়াল ব্যাঙ্কে জয়েন করেছিল। ব্যাঙ্কটি পরে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তড়িৎ ও মনোজ আমাদের ভাল বন্ধু ছিল। আমাদের ব্যাঙ্কে যোগ্য মহিলা কর্মীদের সংখ্যাও অনেক। বহুক্ষেত্রে ওরা পুরুষদের টিমকে বলে বলে গোল দিয়েছে। মহিলারা ব্রাঞ্চের দায়িত্ব পাওয়ার পর গ্রামের স্বনির্ভর দলের মহিলা সদস্যদের নানা ভাবে সুবিধা হয়েছে। কিছু মহিলা কর্মী আমার সেদিনও অভিভাবক ছিল আজও তাই আছে। ওরা বয়েসে ছোট, আচরনে বড়দিদির মতো।
কোচবিহারে আমার বিশেষ আশ্রয়স্থল ছিল কাজলের বাড়ি। কাজলের মত এমন দুঁদে ডিপ্লোম্যাট দুটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওর দাদা স্টেট ব্যাঙ্কের খাগড়াবাড়ি (এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কে)-শাখায় চাকরী করত। ওরা দুই ভাই অনেক লড়াই করে পরিবারকে দাঁড় করিয়েছিল। কাজলের মন ও মস্তিষ্ক আমাদের ব্যাঙ্ক ইতিহাসের এনসাইক্লোপিডিয়া। জনসংযোগে (পি.আর.) অত্যন্ত দক্ষ। কাজের ব্যাপারে ওর সুনাম ছিল । নানা প্রশ্ন নিয়ে আমাদের কাছে আসত। আমাদের বাড়িতে ওর অবাধ যাতায়াত ছিল।
দু-একজন ছিলেন যারা তখনকার ফ্ল্যাগশিপ ব্যাঙ্ক ঋণ প্রকল্প ‘ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (IRDP)-টিতে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারদের ঢালাও ঋণ দিয়েছিল। IRDP কে মজা করে বলা হতো “ইনকো রুপিয়া দেনে পড়েগা”। দারিদ্র সীমার নীচে বা “বিলো পভার্টি লাইন” ( BPL ) তালিকা তৈরী করে বিভিন্ন স্তরে পাঠান হতো। তালিকা সব সময় নির্ভুল হতো সেটা বলা যায় না। প্রকল্প ব্যয়ের ২৫%- ৫০% বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা সাবসিডির ব্যবস্থা ছিল। তখন গরীব মানুষ পশুপালন প্রকল্প, মাছ চাষ, হাঁস মুরগী পালন, হালের বলদ, গরুরগাড়ি, রিক্সা, রিক্সা ভ্যান, ক্ষুদ্র ব্যবসা বা হাতের কাজ-এর জন্য ঋণ গ্রহন করতো।
স্পেশাল কম্পোনেন্ট প্লান (SCP)ও ট্রাইবাল সাব প্লান (TSP) এই দুটি প্রকল্পে যথাক্রমে তপশিলী জাতি ও উপজাতিভুক্ত গ্রামবাসীদের স্বরোজগার করার লক্ষে ঋণ দেওয়া হত। প্রকল্প ব্যয়ের ৫০% সর্বোচ্চ ৭৫০০ টাকা সাবসিডি দেওয়ার সুযোগ ছিল। একদিন সকালে ডিএম বাংলোয় উনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। উনি আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার্স মিটিং-এ উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন। সেদিন অন্য একটি ব্যাঙ্কের দু-তিন জন অফিসারকে দেখেছিলাম ডিএম বাংলোর চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসতে। তাঁরা আমাদেরকে দেখে একটু কেমন শুকনো হেসে চলে গেলেন, কোনও কথা হল না। তখন জি. বালাগোপাল ছিলেন ডিএম। আমাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক রেখে চলতেন। সেদিন প্রথমেই বললেন, আপনাদের মিটিঙে আমি যেতে পারব না, ওইদিন আমার জেলায় জরুরি মিটিং আছে। পরে অবশ্য একটু অনুরোধ করতেই রাজি হলেন।
পরে খবর পেলাম ডুয়ার্সের একটি ব্রাঞ্চে তপশিলী আদিবাসীদের TSP ঋণপ্রকল্পে অনিয়মের জন্য পুলিশ ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল। সেদিন ব্রাঞ্চের দায়িত্বে ফিল্ড অফিসার ছিলেন কাজেই তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ব্রাঞ্চের সম্পর্কে অভিযোগ ছিল তারা প্রকল্পের পুরো টাকা ডিসবার্স করতো না। মোটামুটি প্রকল্পের অর্দ্ধেক টাকা লোন অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট করা হতো কয়েক দিন পর রাজ্য সরকারের দেওয়া সাবসিডির টাকা ওই লোন অ্যাকাউন্টে জমা করে দিয়ে ব্যালেন্স “নিল” করে দিত অর্থাৎ লোন অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে দিত। এটা অন্যায়। সেই ব্যাঙ্কের অফিসাররা যদি ব্যাপারটা সেদিন ডিএম বাংলোয় আলোচনা করতেন তবে হয়ত গ্রেপ্তার এড়ানো যেত। তাছাড়া থানায় অভিযোগ করেছিলেন মিঃ এস.এন. ঈশোরারী (W.B.C.S.) মহাশয়। যাকে আমরা অগ্রজের মতো শ্রদ্ধা করতাম, কিন্তু সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মত। উনাকে একবার বললে হয়ত সেই ফিল্ড অফিসারকে কাস্টডিতে থাকতে হতো না। ডিএম আমাদের ব্যাঙ্কের নির্দ্ধারিত মিটিঙে এসে বলেছিলেন “আপনারা নির্ভয়ে কাজ করুন আমি আছি”। তবে আমরা কিন্তু সেই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করতে ভুলিনি।
1990-91 সনে দেবীলাল ছিলেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেট রিলিফ স্কীম (ARDRS) চালু করেছিলেন। মূলত যারা খেলাপী ঋণগ্রহিতা তারা ঋণ মকুবের সুবিধে পেয়েছিলেন, হস্তশিল্পের কারিগরদেরও ARDRS-এর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। অনেকে বলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কৃষিজীবিরা সরাসরি এমন কোন সুবিধা সরকারের কাছ থেকে পান নাই। অনেকে বলেছিলেন ঋণ পরিশোধের অভ্যাসটাই মকুবের কারনে নষ্ট হয়ে যাবে। পরে 2007-2008 সনে আবার কৃষি ঋণ মকুব হয়েছিল। ঋণ পরিশোধের আবহাওয়া কলুষিত হয়েছিল। টেকনিক্যাল কারণে যারা নিয়মিত পরিশোধ করতেন তারা সুবিধে পেলেন না, লাভবান হয়েছিল ডিফল্টাররা।
আমরা অনেকেই এখনও বিশ্বাস করি ছোট ও প্রান্তিক চাষী বা ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণ ফেরত দেওয়ার ইচ্ছে বা চেষ্টা থাকে, যা কিনা বিত্তবানদের কম থাকে। একজন ব্যবসায়ী যার টাকা ফেরত দেয়ার সঙ্গতি আছে তাকে ঋণ পরিশোধের তাগাদা দিয়ে কটু বাক্য শুনেছি। এ অভিজ্ঞতা হয়ত অনেকেরই হয়েছে। আর একটা কথা শিখেছিলাম, যদি ঋণ দিতে হয় তবে লোকটিকে বারবার চক্কর কাটানো চলবে না নইলে সেও পরিশোধের সময় আমাদের ঘোরাবে। গ্রামের গরীব মানুষদের সম্মানবোধ একটু বেশি তো বটেই। ব্যাঙ্কের লোক গ্রামে কারও বাড়ি গিয়ে তাগাদা দিলে ঋণখেলাপীর সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন হয়, এখনও দু-চার জন এমনটাই ভাবে। আমরা শ্রী প্রদীপ কুমার দাস সাহেবেবের কাছ থেকে একটা শিক্ষা প্রথম থেকেই পেয়েছিলাম, ঋণ আদায়ের জন্য না হোক কৃষকের হাল-হকিকত বুঝতে গ্রামে ঘুরতেই হবে।
মেলামেশা আন্তরিক হলে গ্রামে কাজের সুবিধে হয়। একদিন এস.ডি.ও. মাল ফোনে বললেন আপনাদের ক্রান্তি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার বুড়াই (অরিজিৎ সরকার) বাবুকে এলাকার মানুষ ছাড়তে চাইছে না, উনার বদলিটা আপাতত স্থগিত বা বাতিল করে দিন। ওখানে এই দাবিতে পথ অবরোধ চলছে”। বুড়াই কিন্তু তার ডাক নামেই সর্বত্র পরিচিত। একটু পর মালবাজার থেকে এক সাংবাদিক ফোনে একই অনুরোধ করেছিল। ক্রান্তি ব্রাঞ্চ থেকেও অনুরোধ আসছিল ওখানে যাওয়ার জন্য। হেড অফিস থেকে ফোন পেয়ে সেদিন ক্রান্তি গিয়েছিলাম এবং অনেক আলাপ আলোচনার পর স্থানীয়রা বুড়াইকে ছাড়তে রাজি হয়েছিল একটা শর্তে “মাঝে মাঝে বুড়াইদাকে ক্রান্তিতে আসতে হবে”। কাগজে ফলাও করে খবরটা বেরিয়েছিল।
এটাও একটা বিস্ময়ের যে প্রদীপ কুমার দাস দু-বার উত্তরবঙ্গে চেয়ারম্যান হয়ে এসেছিলেন। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এটা বিরল দৃষ্টান্ত। মাঝে ওই পদে ছিলেন প্রণব কুমার দাস। ২য় দাস সাহেব যখন চেয়ারম্যান সে সময় ব্যাঙ্কের দুটি ইউনিয়নের ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াই চূড়ান্ত উচ্চতায় পৌঁছেছিল। আন্দোলনের একটা অস্ত্র ছিল “রিপোর্ট রিটার্ন বন্ধ”। উনি এমনিতে দিলদরিয়া মানুষ ছিলেন। সেইসব আন্দোলনের রেশ চলেছিল শ্রী অমল ব্যানার্জী ও অরবিন্দ ঘোষের জমানায়।
একসঙ্গে ট্যুরে গেলে ২য় দাস সাহেব পথে সব রকম খরচ নিজের পকেট থেকে করতেন। উনিই প্রথম অফিসিয়াল ট্যুরে আমাকে এরোপ্লেনে সফর অনুমোদন করেছিলেন। শুনেছি উনি রিটায়ার্ড ফৌজী ছিলেন। চূড়ান্ত স্মার্ট একটু মদিরা বিলাসী দিলদরিয়া মানুষ। তিনি ইংরেজি বলতেন ও লিখতেন ভারি সুন্দর। নানা জটিল বিষয় নিয়ে ইউনিয়নের চাপ সহ্য করতে পারলেন না। অনির্দ্দিষ্ট কালের জন্য ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন।
উনার সঙ্গে একবার স্পেশাল SLBC মিটিঙে কলকাতা গিয়েছিলাম। ব্যাঙ্কিং দপ্তরের কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী মিটিঙে উপস্থিত ছিলেন। মিটিং হয়েছিল কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাকে বলেছিলেন একটা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে তাকে সল্টলেকের বাড়ি থেকে তুলে নিতে। সময় মত আমরা রওনা হয়েছিলাম। মিটিঙে আমি উনার ঠিক পেছনে কাগজপত্র নিয়ে বসেছিলাম। মিটিঙে ডাব থেকে ক্ষীর (পায়েস) অঢেল বন্দোবস্ত। শুরুতে মৃদু মদিরার সুবাস পেয়ে বলেছিলাম যদি কেউ কোনও প্রশ্ন না করে তবে আমরা সেদিন শ্রোতা। উনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।
মিটিঙে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত উপস্থিত ছিলেন মানে উনি একাই মিটিং উচ্চতায় পৌছে দিয়েছিলেন। সেদিন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের জোনাল ম্যানেজার চুপচাপ। দাস সাহেব ফিসফিসিয়ে একবার আমাকে বলেছিলেন “ওটা আমাকে ডিঙ্গিয়ে এজিএম হয়েছে। শুধু তেলের জোরে। জানেই না কিছু তাই আজকে চুপ করে আছে”। মিসেলিনিয়াস (বিবিধ) আলোচনার সময় দাস সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে ওঁর ব্যারিটোন ভয়েসে অনবদ্য অ্যাকসেন্টে বললেন “আই হ্যাভ এ হাম্বল সাবমিশন স্যর। আই অ্যাম প্রনব কে দাস চেয়ারম্যান, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কোচবিহার। উই হ্যাভ আ স্কেলিটন ব্যাঙ্ক ব্রাঞ্চ নেমড চিলকিরহাট, হ্যাভিং মিনিমাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার । দে হ্যাভ সার্ভিস এরিয়া কমপ্রাইজিং অব থ্রি গ্রাম পঞ্চায়েতস হোয়াইল মোস্ট অব রুরাল ব্রাঞ্চেস আর হ্যাভিং ওয়ান অর টু জিপি-স অ্যাজ সার্ভিস এরিয়া। দিস ইজ আটার ভায়োলেশন ওফ দি প্রিন্সিপল অব সার্ভিস এরিয়া আপ্রোচ এন্ড আনফেয়ার টু। এস.এল.বি.সি. মে কাইন্ডলি সি অ্যানড রিডিউস ইটস এরিয়া”। মন্ত্রী শুনে হিন্দিতে বললেন “এটা উচিত নয়। দ্রুত ব্যবস্থা নিন”।
ফেরার পথে উনার মেজাজ একেবারে বিন্দাস। আমাকে বললেন “তোমাদের জোনাল ম্যানেজার পারবে এই ফোরামে বক্তব্য রাখতে? দেখলে তো মিটিঙের পর হাত বাড়িয়ে বলল কনগ্রাচুলেশন”। একটু পরে বললেন “তুমি কাল ফিরে যাও, আমার কলকাতায় কিছু কাজ আছে আমি কয়েকদিন পরে ফিরব”। সেবার ফিরেছিলেন প্রায় দশ দিন পর। উনি থাকলে জেলার মিটিঙে আমাদের কেউ কোন সমালোচনা করতে পারত না। বিশুদ্ধ ইংরাজিতে বিনয় বজায় রেখে তীব্র যুক্তি রাখতেন। তথ্যের ধার ধারতেন না, ভাষনেই বাজি মাত করার ক্ষমতা ছিল।
একবার দিলীপ কুমার মুখোপাধ্যায় GS, AIRRBEA ওঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। অনেকটা সময় ধরে আলোচনা চলেছিল। ওই দুই ‘বিগ উইগস’-এর আলোচনায় আমি ছিলাম নির্বাক বা হতবাক শ্রোতা। প্রনব কে দাস সাহেব উনাকে বলেছিলেন “গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধে কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের মত না হলে কর্মচারী বিক্ষোভ চলবেই”। দিলীপদা পরে আমাদের বলেছিলেন খুব কম চেয়ারম্যান আমাদের মূল দাবি “সম কাজে সম বেতন-“কে এমন দ্বিধাহীন সমর্থন জানিয়েছেন”।
আমার বন্ধু মিঠু (দেবপ্রসাদ রায়)-র সহচর শ্রী সুভাষ দাস মহাশয় ছিলেন আমাদের ব্যাঙ্কটির ভারত সরকার কর্তৃক নির্বাচিত নমিনি ডাইরেক্টার। মিঠুর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের ব্যাপারটা উনি খুব ভাল জানতেন, উনি আমাকে প্রনব কে দাস সাহেব সম্পর্কে বলেছিলেন “এমন ইংরাজি বলেন যে উনার কোনও কথাই আমি বুঝতে পারি না। তবে উনি খাবার টেবিলে বাংলা বলতেন আর আমার সব কথাই শুনতেন। মানুষটা মজাদার”। একবার বেশি সুদ পাওয়া যাবে এই যুক্তিতে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচ কোটি টাকা তুলে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের আ্যাকাউন্টে আমার সতীর্থরা জমা করেছিল। ফলে কিছুটা হলেও স্পনসর ব্যাঙ্কের রোষানলে পড়েছিলেন প্রণব কে দাস সাহেব।
(ক্রমশ)
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team