উত্তরবঙ্গের ম্যাজিক দরজা খুলে গিয়েছে। সিকিমের সঙ্গে রেল যোগাযোগ আর কল্পনা নয়— তা এখন একশোভাগ বাস্তব। একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প হিসাবে তৈরি হচ্ছে সেভক-মংপো রেলপথ। ট্র্যাক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সাল থেকে। পাঁচ বছর আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল অন্যান্য নির্মাণ কাজ। স্বপ্নপূরণের এই প্রজেক্টের নাম 'Sivok Rangpo BG Rail Line Project ', নির্মাণের দায়িত্বে আছেন IRCON INTERNATIONAL LIMITED সংস্থা। বলাই বাহুল্য, এই প্রকল্পটির অন্যতম লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সিকিমের অনায়াস সংযোগ। এই রেলপথে সংযুক্তির ফলে একই সঙ্গে পর্যটনশিল্প, বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষার মতো বিষয়গুলিও গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এই রেলপথকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে শিলিগুড়ি এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চল। জি টোয়েন্টি সম্মেলনকে সামনে রেখেই এই ঘোষণায় উত্তেজনার ও আশার পারদ চড়ছে উত্তরবঙ্গবাসীর।
গ্যংটক শহর, পাশ্ববর্তী অঞ্চল এবং নাথুলা পাস-এর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্তরায় দূর করবে এই রেলপথ। এবং সেটাই এই পরিকল্পনার প্রাথমিক উদ্দেশ্য। তেরোটি ব্রিজসহ মোট তেত্রিশটি নদীর উপর দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই রেলপথ। সামগ্রিক ব্রিজ দৈর্ঘ্য ২.২ কিমি। আন্ধেরি ঝোরা, শ্বেতিঝোরা, রিয়াং, রম্ভি, গেইলখোলা, ডালুখোলা, তারখোলা, সুকিয়াখোলা, রংপো এবং তিস্তা—এই সমস্ত নদীর উপর দিয়ে যাবে এই রেলপথ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নদী কালিঝোরার তিস্তা এবং রংপো চু। রেলস্টেশন হিসাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে সেভক স্টেশনকে। এই রেলপ্রযুক্তিকে আগামী দিনে বৈদ্যুতিকরণের পরিকল্পনাও রয়েছে। বর্তমানে এখানে টানেল থাকছে ১৪টি। সমস্ত টানেল মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ৩৮.৬৭ কিমি। এই রেলপথের প্রস্তাবিত প্রথম স্টপেজ বা স্টেশন হতে চলেছে রিয়ং, এরপরে তিস্তাবাজার, মেলি প্রভৃতি। শেষ স্টেশন রংপো। ১৪নং টানেলের পরে অবস্থিত রংপো স্টেশন। প্রকল্পের সবচেয়ে বড় টানেল হল ১০নং টানেল। টানেল বা সুড়ঙ্গপথ এই প্রকল্পের প্রায় ৮৫ শতাংশ জুড়েই রয়েছে। স্টেশন প্রায় ১০ শতাংশ, ব্রিজ ৫ শতাংশ। হিল কুইন শিলিগুড়ির গৌরব বৃদ্ধি করবে এই রেলসংযোগ। এখন কবে তা বাস্তবায়িত হয়ে ওঠে সেই দিকেই তাকিয়ে পর্যটক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষও।
তবে এই প্রকল্পটির রূপায়নের ক্ষেত্রে কর্মকুশলী সংস্হা এবং বাস্তুকারদের প্রধান সমস্যা হল পাহাড়ের শুকনো ও ঝুরঝুরে মাটি। বাস্তুকারদের ও নির্মাণকর্মীদের সমস্যাতে ফেলেছে এই মাটি। তবু সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে চলছে নির্মাণকাজ। আশা করা যেতে পারে আগামী বছরের মধ্যে সম্ভব হয়ে উঠবে রোমাঞ্চকর এই যাত্রাপথ। হিমালয়ের বুক চিরে সিকিমের পথগামী এই রেলযাত্রা পর্যটকদের নির্ভরস্থল হয়ে উঠবে বলাই বাহুল্য। আজ যখন শিলিগুড়ি এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলি জি টোয়েন্টি বৈঠকে কার্যক্রমের অন্যতম বিচার্য, সেখানে গ্রিন টুরিজম,অ্যাডভেঞ্চার টুরিজমের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে যাবে এই রেলপথ। এই রেলপথই আগামী দিনে হয়ে উঠবে বাঙালির ব্যবসা, পর্যটন এবং সিকিমের সঙ্গে সংযোগের প্রধান মাধ্যম— এ আশা আর বাতুলতা নয়!
(অনুলিখন: নবনীতা সান্যাল)
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team