× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
×
সংখ্যা: বৈশাখ, ১৪৩০
সম্পাদকের কলম
অন্তরে অন্তরে দাও আলো দাও
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
বিশেষ নিবন্ধ
উত্তরবঙ্গের ম্যাজিক ডোর: সেভক রংপো রেলপথ
শান্তনু ভট্টাচার্য্য
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব ৮ | বিষহরি পালা
সব্যসাচী দত্ত
নেট গল্প
একদিন
অগ্রদীপ দত্ত
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
গলি থেকে রাজপথ: জার্নি থ্রু তিলক ময়দান
নবনীতা সান্যাল
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
কাওয়াখালির হস্তশিল্প মেলা
সুদেষ্ণা চক্রবর্তী
দিনাজপুর ডে আউট
রাইখোর আজও মহাভারতের ‘মৎস্যদেশ’ দিনাজপুরের রূপালি অহংকার
পাপিয়া দেবনাথ
দিনাজপুর ডে আউট
সতীপুকুর শ্মশান
মনোনীতা চক্রবর্তী
দুয়ার বার্তা
নিমতি চা-বাগানের অসুর সমাজ আজও নিজেদের ব্রাত্য ভাবে
শিঞ্জিনী চট্টোপাধ্যায়
কোচবিহার অনলাইন
পরিকল্পনাহীন কৃষিতে চাষির মুখে হাসি ফুটছে কই?
তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস
ডুয়ার্স থেকে দূরে নয়
মুনথুম। শান্তি ও নিঃস্তব্ধতার ঠিকানা
মমি জোয়ারদার
খোলা মনে খোলা খামে
ডিজিটাল যুগে হারিয়ে যাচ্ছে পাড়ার পরম্পরা
বিদ্যুৎ রাজগুরু
খোলা মনে খোলা খামে
একটি নীড়ের খোঁজে
শান্তনু চক্রবর্তী
খোলা মনে খোলা খামে
উৎসব আসে ও যায়, কিন্তু মনের দরজা খোলে কোথায়!
শৌভিক রায়
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টৌন
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
পাতাবাহার
পেপার লেমন চিকেন
পাতা মিত্র
উত্তর-পূর্বের চিঠি
আড় বিষু থেকে নববর্ষের দিনগুলি
সিতাংশুরঞ্জন দে (আগরতলা)
উত্তরের বইপত্র
‘অয়ন’: কোচবিহারের প্রথম লিটল ম্যাগাজিন
দেবায়ন চৌধুরী
উত্তরের বন্যপ্রাণ
হাতির বাগান না বাগানের হাতি?
অভিযান সাহা
আমচরিত কথা
মেয়ে-হস্টেল | আমচরিত কথা | পর্ব - ১৬
তনুশ্রী পাল
পুরানের নারী
জটিলা কুটিলা মন্থরা
শাঁওলি দে

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী গৌতমেন্দু রায়

হাতির বাগান না বাগানের হাতি?

অভিযান সাহা
Hatir Bagan na Baganer Hati

এক চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বাগানের রাস্তায় একটা বোর্ডে লিখেছেন "Elephant friendly zone, এখানে হাতিদের আনাগোনা ও পারাপারের রাস্তা, তাদের বিরক্ত করবেন না”। এত বড় বোর্ড যে অনায়াসে সবার চোখে পড়ে, খবরের কাগজে যায়, দেশ-বিদেশ থেকে কত রথী-মহারথীরা আসে দেখবার জন্য। মানুষ জানে, বোঝে, একে ওপরকে বলাবলি করে, "বাগান মালিকের তুলনাই হয় না, আমাদের কথা ভাবে, হাতিদের কথা ভাবে।"

সেই রাতে হাতিরা আসে, শুঁড় দিয়ে বোর্ডটিকে ছোঁয়, কিন্তু তাতে লেখা ভাষা তাদের মাথায় আসে না। আবার আপন মনে রাস্তা ধরে চলে, গন্ধ নেয় অন্য হাতির, গন্ধ পায় গোবরের। অবশেষে প্রশ্ন করে নিজেকে, "আমার পরিবার কি এই রাস্তায় গিয়েছে ?"

হ্যাঁ, গিয়েছে, আর তাদের যেতেই হবে, কারণ অতীতের খয়ের, জারুলের জঙ্গল এখানে নেই, এখানে এখন তিন ফুটের ছোটো ছোটো সাজানো ঝোপ।

“এরকম ঝোপ তো মায়ের সাথে ছোটবেলায় দেখিনি। তাতে কেমন এক বিশ্রী, উগ্ৰ গন্ধও বটে। আমার জঙ্গলে এমন কোন গাছে এরম গন্ধ নেই। দ্রুত পা চালাই, আর কিছুদূর এমন গন্ধ হজম করলেই আমার চেনা খয়েরের জঙ্গল পাব। গত রাতে আমার মা এই রাস্তায় গিয়েছে আমার নতুন বোনকে সঙ্গে নিয়ে।

“চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার, ঝিরঝির বৃষ্টিও শুরু হয়েছে, এখানে যদিও ঝি ঝি পোকার ডাক নেই। কিন্তু হঠাৎ করে কীসের এত আওয়াজ ? সে্কী! মায়ের গলা শুনতে পাচ্ছি মনে হয়। আমাকে দ্রুত যেতেই হবে। এই অচেনা তিন ফুটের জঙ্গলে কত বড় বড় গর্ত, অনেকটা সরু নালার মত, খুব চাপা। এগুলোকে নাকি "চা-নালা" বলে। আমার বড় বড় থামের মত পা এই নালা ভেঙে দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর আমি তাই করলাম। উপায় নেই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে মায়ের কাছে যেতেই হবে।

“এভাবেই কিছুটা এগিয়ে দেখি, মা সামনেই শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আমায় ইশারা করছে। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। সামনে যেতেই দেখি মায়ের চোখে জল, মা'কে স্পর্শ করতেই বুঝতে পারলাম খুব একটা বড় বিপদ হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজে স্পর্শ দিয়েই আমরা মনের ভাব বিনিময় করি। গতরাতে আমার ছোট বোনটা ঐ রকম এক চাপা চা-নালায় পড়ে গেছে, উঠতে পারছে না। চারিদিকের মাটি ধ্বসে পড়েছে। তাই আমাদের কেউ সাহস করতে পারছে না তাকে টেনে তোলার। এই কঠিন বাস্তব বোঝার মতো যে কেউ নেই। এই বৃষ্টির রাতে বাগানের মালিক তার পোষ্যকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

“বলতে বলতেই দূরে কারা যেন সাদা টর্চ এর আলো জ্বেলেছে। ওই যে, ওই যে আবার সেই মানুষের দল। আমরা মনে হয় আর ঘরে ফিরতে পারবো না। নাকে এল হালকা বারুদের গন্ধ, হ্যাঁ এদিকেই আসছে যে। ওরা কারা, খাকি পোষাক পরে দল বল নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, সঙ্গে একটা গাড়িও দেখতে পাচ্ছি। এই তীব্র বারুদের গন্ধে আমার পরিবারের বাকি সবাই জঙ্গলের পথ ধরেছে। তবে আমি আমার বোনকে ছেড়ে যাবো না। আমার মাও তাই, আমরা দুজনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।

“কিন্তু এই মানুষগুলো যে আমাদের দিকেই পটকা ছুড়ে চলেছে অনবরত। সর্বনাশ, এবার কী হবে? এ যে মারাত্মক। কদিন আগেই পাশের গাঁয়ের লোকজন এই পটকা আমার শুঁড়ে মেরেছিল, তার ক্ষত এখনও মেটেনি। মাকে নিয়ে বাধ্য হয়েই জঙ্গলে ফিরে গেলাম, জঙ্গলে সবাই আমার বোনের জন্য উদগ্রীব, মা কেঁদেই চলেছে। দূর থেকে বোনের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। কিছু মানুষের হৈ হুল্লোড় , গাড়ির ইঞ্জিনের আওয়াজ, আরও কত কী। কিছুই যে বুঝতে পারছি না। চোখের সামনে আবার একটা হেরে যাওয়ার ভোর হতে চললো।

“অবশেষে বৃষ্টি থামলো, হঠাৎ করে মা জঙ্গল থেকে বেরিয়েই হাঁটা দিল সোজা বোনের দিকে। মায়ের পেছন পেছন আমিও চললাম, লোকজন আর দেখতে পারছি না, বহুদূরে সেই খাকি পোষাক পরা লোকগুলো দাঁড়িয়ে! কিন্তু এ কী, আমার বোন যে সোজা নালা থেকে উঠে পড়েছে, কাদামাটি গায়ে মায়ের দিকে দৌড়ে আসছে। আনন্দে আটখানা, মাকে সামনে পেয়ে সবার আগে সে প্রাণভরে দুধ খেল। আমিও সামনে গেলাম, দলের বাকি কয়েকজন সারিন দিদিরাও এগিয়ে এল। সবাই আমার বোনটিকে পেয়ে এতটাই খুশি যে বলে বোঝাতে পারছে না। আসলে আমাদের সমাজে তো ছোট বাচ্চারাই সবকিছু। তাদেরকে ঘিরেই তো এই সমাজ, নাহলে কে বয়ে নিয়ে যাবে আমাদের উত্তরসূরীর শিরোপা।

“নেহাত রক্ষা যে আমার পরিবারে এখন কোন সাহানীয়া গুণ্ডা নেই, নাহলে আমার বোনটাকে দলে নিতেই চাইতো না। কারণ ওর গায়ে অল্প হলেও মানুষের গন্ধ লেগেছে। শুনেছি আমাদের মতো এমন অনেক হস্তি পরিবারকেও তাদের সদ্যোজাতকে নিয়ে ভুগতে হয়েছে। কেউ নালায় পড়ে গিয়ে চিরতরে পৃথিবী থেকে চলে গেছে, কেউ তার মা ও আত্মীয়স্বজনদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে আজীবনের জন্য।

“সেই দিন থেকেই এই খাকি পোষাকের লোকগুলোর সাথে আমাদের ভালো পরিচয় হয়ে গিয়েছে। যাক, বিপদে বাগানের মালিকের দেখা না পেলেও, খাকিরা ঠিকই ঝড়জল পেরিয়ে আমাদের জন্যই এসেছে। তারপরেও এদের বহুবার দেখেছি। বিভিন্ন কারনে মাঝেমাঝে রেষারেষি হয় ঠিকই, কিন্তু এরা সেই মানুষগুলোর চেয়ে ভালো, যারা আমাদের পায়ে চলার পথে বড়বড় গর্ত, নালা নিজের ফায়দায় খুঁড়ে রেখেছে।”

মানুষের ভাষায় হাতির এই কাল্পনিক আত্মকথার অবতারণা। মানুষের অবরোধে হাতির দল চা-বাগানে আটকে পড়েছে, এ খবর হামেশাই শোনা যায়। ধান কিংবা ভুট্টার মরসুমে নিত্যদিনের ঘটনা। আসলে সমগ্ৰ উত্তরবঙ্গ জুড়ে চা বাগানের অবিন্যস্ত বিস্তারের ফলে বাদ যায়নি হাতিদের যাতায়াতের রাস্তা থেকে শুরু করে বিচরণভূমিও। হাতিদের জীবনধারায় হাতিরা কখনোই একই জায়গায় স্থায়ী থাকতে পারে না। দৈহিক ও জৈবিক চাহিদায় তাদের দলবল, সংসার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় বন-বনান্তরে। কারণ, পেটের টান যে মারাত্মক, এত বড় সংসার, এক জায়গায় থাকলে খাবে কী? আজ এই জঙ্গল, কাল ওই জঙ্গল, এই করেই বছর ঘুরে যায়। ততদিনে গাছপালা আবার নতুন করে সতেজ হয়ে ওঠে, মাটি হয়ে ওঠে উর্বর, গুবরে পোকারা অর্ধপাচ্য বীজ ছড়িয়ে দেয়, একটা পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়া চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। হাতিরা তাদের চলার পথ, ঘর, পরিবার, চারপাশের জগৎ কোনো কিছুই স্মৃতিশক্তি থেকে মুছে যেতে দেয় না। ফুটফুটে বাচ্চার জন্মের পর থেকেই হাতি সমাজের রীতিনীতি তাকে শিখিয়ে দেয় দলে তার সঠিক অবস্থান ও উদ্দেশ্যে। এমন শৃঙ্খলা সমাজের সব পশু জগতে থাকে না বললেই চলে। এমনকি মানব সমাজেও না।

একটি হাতির চোখে তার নিত্যদিন মানে বেঁচে থাকবার লড়াই। না, শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সবার আগে মেরুদন্ড শক্ত করে নিজের পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। এসব না বোঝারই কথা, এত বড় একটা প্রাণী, তার মাথায় আবার এত কিছু চলে? হ্যাঁ, চলে বটে, এই জন্যেই তো সে হাতি। "হাতিরা কি ত্যাগ করে"? হ্যাঁ করে, নাহলে কেউ বাচ্চাদের আগলে রাখতে গিয়ে সপরিবারে লোকো পাইলটের হাতে প্রাণ দেয় না! আরও বলছি - হাতিরা সত্যিই ত্যাগ করে এবং করতে শিখেছে পরিস্থিতি থেকে। প্রতিদিন যখন হাজার হাজার বৃক্ষ প্রাণ দেয়, তখন এক শ্রেনীর জীব খুশি হলেও হাতিরা কিন্তু দূর থেকে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে শুধু কাঁদতেই পারে, সকলের সামনে লোক দেখিয়ে নয়। সেই নীরব কান্না অবশেষে জঙ্গলের মাটিতেই মিশে যায়। একটি সদ্যোজাত বাচ্চা তার মায়ের কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে মানব সভ্যতার প্রকৃত ধ্বংসলীলা। তার চোখে জল এলেও, আমরা তাকে বলি "হার্ডেরিয়ান গ্রন্থির নিঃসরণ"।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team