বিপিনবাবু ঘুরতে ভালোবাসেন। প্রতিরাতেই ঘুমোতে যাবার আগে ফেসবুকটা খোলেন একবার। ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম নামে একটা পেজ আছে। প্রতিরাতেই কিছুক্ষণের জন্য বিপিনবাবু অবাক হয়ে যান। তার চেনা চৌহদ্দির বাইরেও পৃথিবীর এত বিস্তার? এত রঙ? কত কত জায়গা ঘোরা যে বাকি রয়েছে এখনও।
একের পর এক দেশ ঘুরে, এক আধটা পোস্ট শেয়ার করেন।
ক্যাপশনে লেখা থাকে 'একদিন হবে।'
পাশে শুয়ে থাকা ক্লান্ত স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, 'টিকেট কেটে ফেলেছি। রেডি হও।'
স্ত্রী সাড়া দেয়না। বিপিনবাবু আপনমনেই বিড়বিড় করতে থাকেন, 'অক্টোবরে আমরা যখন পৌঁছোবো তখন তো বরফ পড়বে ওখানে। টিকেট থাকবে না ক্যানসেল করব? তোমার তো আবার ঠান্ডার ধাত। পারবে তো যেতে? আগেরবার কাশ্মীরে যাওয়াটাই ভুল হয়েছিল মনে নেই! তখনও তো বরফ...'
স্ত্রী পাশ ফিরে শুয়ে ভাবতে থাকেন একটা রোপওয়ে কেবিন পাহাড়ি উপত্যকা বেয়ে উঠে যাচ্ছে উপরে। কাচের জানালার গায়ে এসে লাগছে বরফ কুচির টুকরো। কেউ নেই আশেপাশে। ভেতরে শুধু সে আর বিপিনবাবু। রোপওয়ে গতি ধরে এখন তীব্র বেগে উঠে যাচ্ছে উপরে। উঠেই যাচ্ছে...
স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়তেই লাইট অফ করে দিলেন বিপিনবাবু। রোজকার মতো আজকের গল্প বলার কোটা শেষ। এই দশ বাই দশের কামরায় এত বছর ধরে কত কত পাহাড় মরুভূমি সমুদ্রতীর যে ঘুরে এলেন তার হিসেব নেই। অসুস্থ স্ত্রী আর অভাবী পকেট এতেই সন্তুষ্ট হয়ে আসছে বরাবর। আজও হল। সশরীরে ঘুরতে যাওয়া অভাবীর মুখে মানায় না, তিনি ভালো করেই জানেন।
কিন্তু তীব্রভাবে বিশ্বাস করেন সেই 'একদিন' নিশ্চয়ই আসবে। যেমন আজও ঘুমিয়ে যাবার ঠিক পর মুহূর্তেই দেখলেন তিনি একটা রোপওয়ে কেবিনের ভেতর বসে রয়েছেন, মুখোমুখি তার স্ত্রী। নিশ্চুপ।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team